এপিয়াস
নামে একজন দক্ষ ছুতার বা মুষ্টিযোদ্ধা সুবিশাল এই ঘোড়াটি তৈরি করেন।
পলায়নের ভান করে গ্রিকরা জাহাজে করে নিকটবর্তী টেনিডোস দ্বীপে চলে গেলেন।
যাবার সময় তারা সাইননকে সেখানে রেখে গেলেন। সাইনন ট্রয়বাসীকে বোঝাল যে, এই
ঘোড়াটি এথিনাকে উপহার দেওয়া হয়েছে ট্রয় নগরকে অপরাজেয় করে তোলার জন্য।
ট্রয়বাসী আনন্দ-উল্লাস করতে করতে ঘোড়াটিকে নগর-দেয়ালের অভ্যন্তরে নিয়ে এলো।
তার ভেতরে আত্মগোপন করে থাকে উল্লেখযোগ্য
সংখ্যক গ্রিক যোদ্ধা। বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে গ্রিক বাহিনী। কিন্তু,
এ’সকল কূটচালের কিছুই আঁচ করতে পারেনি ট্রয় অধিবাসী কিংবা ট্রয়ের
কর্তাব্যাক্তিরা।
তাদের এই অদূরদর্শিতাই মূলত ধ্বংস ডেকে এনেছিলো ট্রয় নগরীর।
মহা-আনন্দে আর উৎসাহে সেই ঘোড়াটিকে রাজ্যের ভেতরে নিয়ে আসে ট্রয়বাসী। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, রাতের গভীরে ঘোড়া থেকে বের হয়ে ট্রয়বাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় গ্রিকরা। খুলে দেয় নগরতোরণ। ট্রোজান যুদ্ধ ডেকে আনে অশেষ দুর্গতি।
গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় । মুহূর্তের মধ্যে লকলকে আগুন গ্রাস করে নেয় ট্রয়নগরী। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় এককালের সাজানো সুন্দর ট্রয়নগরী।
ইতিহাস আর মিথোলজি, উভয় মাধ্যমই ট্রয় নগরী ধ্বংসের জন্যে হেলেনকেই দায়ী করে থাকে। ইউরিপিডিসের ‘ডটার্স অব ট্রয়’তে হেলেনকে দেখানো হয়েছে ‘তেড়ে আসা অভিশাপের সন্তান, ঈর্ষা ও খুনের সন্তান, পৃথিবীর লালিত প্লেগ মৃত্যুবিভীষিকা’ হিসেবে। কেনো? হেলেন আসলে নিয়তির ক্রীড়নক তিনি কি সর্বোপরি একজন নারী নন? হেলেন আসলে নিয়তির ক্রীড়নক। হেলেন অব ট্রয়কে আমার, ভালোবাসা বঞ্চিত, অস্থির এক নারীর প্রতিকৃতি বলেই মনে হয়। হোমারের ‘ইলিয়ড ও অডেসি’ কিংবা ইউরিপিডিসের ‘হেলেন’ এ যখন আমি মগ্ন হই, তখন আমি যেনো শুনতে পাই হেলেনের বুকের গভীরে শতবছর ধরে লুকিয়ে থাকা জমাট কান্নার নীরব গর্জন। অক্ষরের কালো আঁখরে, সীমাহীন নৈঃশব্দের মাঝে ভেসে বেড়ানো অশ্রনিনাদ। যুদ্ধ আর ধ্বংসের ঘন মেঘের দায় বারবার গিয়ে পড়েছে হেলেনের ওপর। হেলেন অব ট্রয়। যুদ্ধ মানে ট্রয়ের যুদ্ধ। ট্রোজান ওয়ার। কেনো? হেলেন অস্বভাবিক রকমের সুন্দর ছিলেন। ভালোবেসেছিলেন এক সুঠামদেহী সুদর্শন যুবককে। পালিয়েছিলেন প্রেমিকের হাত ধরে। এই কি তার অপরাধ ছিলো? তার প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের পূনরাবৃত্তি ঘটেছিলো। এটাই কি তার অপরাধ? ট্রয় ধ্বংসের দায় কি শুধু নারীর ? গ্রীক নৃপতিরা কি নীল সাগরে তরী ভাসিয়েছিল শুধুমাত্র এক হেলেনের জন্য ? রাজ্য জয়ের লোভ কি তাদের ছিলনা ? দৃষ্টির অন্তরালে হেলেনের নারী মানসের অব্যক্ত অন্তর্বেদনার কথা কেনো উঠে আসে নি ইতিহাসের পাতায়? ইতিহাস কি এখানে একচোখা আচরণ করেনি?
পাদটিকা: প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ট্রয় নগরীকে এর সময়কাল ও পুনর্গঠনের উপর ভিত্তি করে, নগরীর উত্থান এবং পতনকাল, ৯টি ভাগে বিভক্ত করেছেন।
1. ট্রয় ১: ৩০০০-২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (সময়কাল)
2. ট্রয় ২: ২৬০০-২২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
3. ট্রয় ৩: ২২৫০-২১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
4. ট্রয় ৪: ২১০০-১৯৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
5. ট্রয় ৫: বিংশ-অষ্টাদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
6. ট্রয় ৬: সপ্তাদশ-পঞ্চদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
7. ট্রয় ৬h: তাম্র সভ্যতার শেষ দিকে চতুর্দশশতাব্দী খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
8. ট্রয় ৭a: মহা দুর্ঘটনাটি এই সমইএ ঘটে ১৩০০-১১৯০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ধারনা করা হয়, হোমারের কাব্যগ্রন্থে ট্রয়নগরীর এই রুপের বর্ণনাই দেওয়া হয়েছে।
9. ট্রয় ৭b¬1: দ্বাদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
10. ¬¬ট্রয় ৭b¬¬2 : একাদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
11. ট্রয় ৭b¬¬3: মহা দুর্ঘটনা ঘটার আগে পর্যন্ত ৯৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
12. ট্রয় ৮: ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ এর দিকে
13. ট্রয় ৯ : ১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
এদের মধ্যে ট্রয় ৬,৭ ও ৯ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ট্রয় ৬ : ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দএর দিকে ধ্বংস হয়ে যায়। যার মূল কারণ ছিল ভূমিকম্প।
ট্রয় ৭: ট্রয় নগরী একাধিকবার ধ্বংস হয়েছিল এবং পুনরায় তা গঠিত হয়েছিল। প্রত্নতত্তবিদ্গন ট্রয়-এর ৯টি ভিন্ন স্তর খুঁজে পেয়েছিল। ট্রয়-৬ এবং ট্রয়-৭কে ট্রোজান যুদ্ধের নিকটতম সাক্ষী মনে করা হয়। ট্রয়-৭ এর সময়েই ট্রয় ধ্বংস হয়েছিল । যার মূল কারণ বিখ্যাত ট্রোজান যুদ্ধ। ট্রয়-৭ ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-এ পূর্ণ রুপ লাভ করে এবং ১১৯০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ধ্বংস হয়। নগরীটি প্রায় ১০০ বছর স্থায়ী হয়। এবং ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দএ পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়। মনে করা হয়, নগরীটি যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল। কিন্ত, এই বক্তব্যের স্বপক্ষে জোরালো এবং স্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। খননের ফলে সেখানে শুধু একটি মানুষের মাথার খুলি, একটি বুকের হার আর একটি পূর্ণ কঙ্কাল পাওয়া যায়। আরও খননকার্য সেই উত্তর না পাওয়া প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। বেশীরভাগ প্রত্নতত্তবিদ্গন একমত যে, ট্রয় ৭ এর ধ্বংসেরর মূল কারণ ট্রোজান ওয়ার।
ট্রয় ৯: ট্রয় নগরির শেষ শহর। রোমান সম্রাট অগাস্টাসের সময় ট্রয় ৯ আবিষ্কৃত হয় এবং রোমান সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিনত হয়। কনস্টান্টিনোপল স্থাপিত হওয়ার পর এই নগরী বাণিজ্যিক ক্ষেত্রটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পরে এবং সম্রাট বাইজান্টাইন এর সময়ই এটি ক্রমে ক্ষয় প্রাপ্তির মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়।
তাদের এই অদূরদর্শিতাই মূলত ধ্বংস ডেকে এনেছিলো ট্রয় নগরীর।
মহা-আনন্দে আর উৎসাহে সেই ঘোড়াটিকে রাজ্যের ভেতরে নিয়ে আসে ট্রয়বাসী। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, রাতের গভীরে ঘোড়া থেকে বের হয়ে ট্রয়বাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় গ্রিকরা। খুলে দেয় নগরতোরণ। ট্রোজান যুদ্ধ ডেকে আনে অশেষ দুর্গতি।
গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় । মুহূর্তের মধ্যে লকলকে আগুন গ্রাস করে নেয় ট্রয়নগরী। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় এককালের সাজানো সুন্দর ট্রয়নগরী।
ইতিহাস আর মিথোলজি, উভয় মাধ্যমই ট্রয় নগরী ধ্বংসের জন্যে হেলেনকেই দায়ী করে থাকে। ইউরিপিডিসের ‘ডটার্স অব ট্রয়’তে হেলেনকে দেখানো হয়েছে ‘তেড়ে আসা অভিশাপের সন্তান, ঈর্ষা ও খুনের সন্তান, পৃথিবীর লালিত প্লেগ মৃত্যুবিভীষিকা’ হিসেবে। কেনো? হেলেন আসলে নিয়তির ক্রীড়নক তিনি কি সর্বোপরি একজন নারী নন? হেলেন আসলে নিয়তির ক্রীড়নক। হেলেন অব ট্রয়কে আমার, ভালোবাসা বঞ্চিত, অস্থির এক নারীর প্রতিকৃতি বলেই মনে হয়। হোমারের ‘ইলিয়ড ও অডেসি’ কিংবা ইউরিপিডিসের ‘হেলেন’ এ যখন আমি মগ্ন হই, তখন আমি যেনো শুনতে পাই হেলেনের বুকের গভীরে শতবছর ধরে লুকিয়ে থাকা জমাট কান্নার নীরব গর্জন। অক্ষরের কালো আঁখরে, সীমাহীন নৈঃশব্দের মাঝে ভেসে বেড়ানো অশ্রনিনাদ। যুদ্ধ আর ধ্বংসের ঘন মেঘের দায় বারবার গিয়ে পড়েছে হেলেনের ওপর। হেলেন অব ট্রয়। যুদ্ধ মানে ট্রয়ের যুদ্ধ। ট্রোজান ওয়ার। কেনো? হেলেন অস্বভাবিক রকমের সুন্দর ছিলেন। ভালোবেসেছিলেন এক সুঠামদেহী সুদর্শন যুবককে। পালিয়েছিলেন প্রেমিকের হাত ধরে। এই কি তার অপরাধ ছিলো? তার প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের পূনরাবৃত্তি ঘটেছিলো। এটাই কি তার অপরাধ? ট্রয় ধ্বংসের দায় কি শুধু নারীর ? গ্রীক নৃপতিরা কি নীল সাগরে তরী ভাসিয়েছিল শুধুমাত্র এক হেলেনের জন্য ? রাজ্য জয়ের লোভ কি তাদের ছিলনা ? দৃষ্টির অন্তরালে হেলেনের নারী মানসের অব্যক্ত অন্তর্বেদনার কথা কেনো উঠে আসে নি ইতিহাসের পাতায়? ইতিহাস কি এখানে একচোখা আচরণ করেনি?
পাদটিকা: প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ট্রয় নগরীকে এর সময়কাল ও পুনর্গঠনের উপর ভিত্তি করে, নগরীর উত্থান এবং পতনকাল, ৯টি ভাগে বিভক্ত করেছেন।
1. ট্রয় ১: ৩০০০-২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (সময়কাল)
2. ট্রয় ২: ২৬০০-২২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
3. ট্রয় ৩: ২২৫০-২১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
4. ট্রয় ৪: ২১০০-১৯৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
5. ট্রয় ৫: বিংশ-অষ্টাদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
6. ট্রয় ৬: সপ্তাদশ-পঞ্চদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
7. ট্রয় ৬h: তাম্র সভ্যতার শেষ দিকে চতুর্দশশতাব্দী খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
8. ট্রয় ৭a: মহা দুর্ঘটনাটি এই সমইএ ঘটে ১৩০০-১১৯০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ধারনা করা হয়, হোমারের কাব্যগ্রন্থে ট্রয়নগরীর এই রুপের বর্ণনাই দেওয়া হয়েছে।
9. ট্রয় ৭b¬1: দ্বাদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
10. ¬¬ট্রয় ৭b¬¬2 : একাদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
11. ট্রয় ৭b¬¬3: মহা দুর্ঘটনা ঘটার আগে পর্যন্ত ৯৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
12. ট্রয় ৮: ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ এর দিকে
13. ট্রয় ৯ : ১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
এদের মধ্যে ট্রয় ৬,৭ ও ৯ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ট্রয় ৬ : ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দএর দিকে ধ্বংস হয়ে যায়। যার মূল কারণ ছিল ভূমিকম্প।
ট্রয় ৭: ট্রয় নগরী একাধিকবার ধ্বংস হয়েছিল এবং পুনরায় তা গঠিত হয়েছিল। প্রত্নতত্তবিদ্গন ট্রয়-এর ৯টি ভিন্ন স্তর খুঁজে পেয়েছিল। ট্রয়-৬ এবং ট্রয়-৭কে ট্রোজান যুদ্ধের নিকটতম সাক্ষী মনে করা হয়। ট্রয়-৭ এর সময়েই ট্রয় ধ্বংস হয়েছিল । যার মূল কারণ বিখ্যাত ট্রোজান যুদ্ধ। ট্রয়-৭ ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-এ পূর্ণ রুপ লাভ করে এবং ১১৯০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ধ্বংস হয়। নগরীটি প্রায় ১০০ বছর স্থায়ী হয়। এবং ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দএ পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়। মনে করা হয়, নগরীটি যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল। কিন্ত, এই বক্তব্যের স্বপক্ষে জোরালো এবং স্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। খননের ফলে সেখানে শুধু একটি মানুষের মাথার খুলি, একটি বুকের হার আর একটি পূর্ণ কঙ্কাল পাওয়া যায়। আরও খননকার্য সেই উত্তর না পাওয়া প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। বেশীরভাগ প্রত্নতত্তবিদ্গন একমত যে, ট্রয় ৭ এর ধ্বংসেরর মূল কারণ ট্রোজান ওয়ার।
ট্রয় ৯: ট্রয় নগরির শেষ শহর। রোমান সম্রাট অগাস্টাসের সময় ট্রয় ৯ আবিষ্কৃত হয় এবং রোমান সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিনত হয়। কনস্টান্টিনোপল স্থাপিত হওয়ার পর এই নগরী বাণিজ্যিক ক্ষেত্রটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পরে এবং সম্রাট বাইজান্টাইন এর সময়ই এটি ক্রমে ক্ষয় প্রাপ্তির মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়।
(সমাপ্ত)